প্রাচীন পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য

 প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য বলতে বোঝায় প্রাচীনকালে নির্মিত সাতটি স্থাপনা বা স্থাপত্যকর্ম যা তাদের সৌন্দর্য, প্রকৌশল দক্ষতা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত ছিল। ঐতিহাসিক হিরোডোটাস (৪৮৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ–সি এ. ৪২৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ), এবং সাইরিনের শিক্ষাবিদ ক্যালম্যকাস (সি এ. ৩০৫-২৪০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) আলেক্সান্ড্রীয়ার প্রদর্শণশালায় বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন।

প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের তালিকা:

  1. মিশরের পিরামিড
  2. ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
  3. আর্তেমিসের মন্দির
  4. অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি
  5. মৌসোলিয়াম
  6. রোডসের কলোসাস
  7. আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর


মিশরের পিরামিড

এটি মিশরে অবস্থিত প্রাচীন পিরামিড-আকৃতির প্রস্তরনির্মিত স্থাপনাসমূহ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত হওয়া মিশরের ১৩৮টি পিরামিডের অধিকাংশই নির্মিত হয় প্রাচীন ও মধ্যকালীন ফ্যারাওদের রাজত্বকালে তাদের ও তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ হিসেবে। কায়রো শহরের উপকণ্ঠে গিজায় সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পিরামিডগুলি দেখা যায়। মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে খুফুর পিরামিড। যা গিজায় অবস্থিত। প্রাচীন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের স্থাপনাগুলির মধ্যে এটিই একমাত্র অদ্যাবধি বিদ্যমান।

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

প্রাচীন মেসোপটামিয়ার সভ্যতায় নির্মিত ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ছিল রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের স্ত্রীর জন্য নির্মিত এক মনোমুগ্ধকর বাগান।   বহুতলবিশিষ্ট এই বাগানে নান্দনিক ফুল, গাছপালা এবং জলপ্রপাতের ব্যবহার একে করেছিল অতুলনীয় সুন্দর।  যদিও এই ঝুলন্ত উদ্যানের অবস্থান এবং এর গঠন নিয়ে এখনও কিছুটা রহস্য আছে, তবুও মানব কল্পনার এই নিদর্শন আজও আমাদের মুগ্ধ করে।




আর্টেমিসের মন্দির

এটি ডায়নার মন্দির নামেও পরিচিত। আর্টেমিসের মন্দির একটি গ্রিক মন্দির যা নির্মাণ করা হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে এফিয়াস (বর্তমান তুরস্ক) অঞ্চলে। ৩৫৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে এক ভয়াবহ অগিকান্ডে এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়।



অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি

পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি জিউসের মূর্তি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৫ অব্দে ফিডিয়াস মূর্তির নক্সা করেন। যে দ্বীপের উপর মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পুরোটা জুড়ে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। সাতজন মিস্ত্রী আড়াই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মূর্তিটি তৈরি করেন। খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে, প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এই মূর্তিটি খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারের সাথে সাথে ধ্বংস করে ফেলা হয়।




মৌসোলিয়াম

মৌসোলিয়াম শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শাসক মৌসোলোসের সমাধিস্থল থেকে।  খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে তার স্ত্রী আর্টেমিসিয়া দ্বারা নির্মিত এই সমাধিস্থলটি ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম। দুর্ভাগ্যক্রমে, ভূমিকম্প এবং প্রকৃতির তাণ্ডবে মৌসোলিয়ামটি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধ্যযুগে এর কিছু অংশ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবুও মৌসোলিয়াম আজও স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে।  এটি প্রাচীন বিশ্বের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষতার এক স্বর্ণযুগের প্রতীক।




রোডসের কলোসাস

এজিয়ান সাগরে অবস্থিত সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম রোডস। এক বিশাল মূর্তি খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দে এই দ্বীপে নির্মিত হয়। এতে সময় লাগে ১২ বছর। দুই স্তরে এই মূর্তিটি বিভক্ত। প্রথম স্তরটি ছিল ৪০ মেট্রিক টন ওজন বিশিষ্ট পাথরের ভিত্তি। মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে, প্রয়োজন সাপেক্ষে কিছু লোহাও ব্যবহার করা হয়েছিল। এর উচ্চতা ছিল ১২০ ফুট। খ্রিস্টপূর্ব ২২৮ অব্দে মূর্তিটির এক পা এক প্রলংকরী ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যায়। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, সারাসিন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করে মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।




আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর

খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে, আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর  মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় তৈরি করা হয়। বাতিঘরের মূল ভিত্তিভূমির আয়তন ও উচ্চতা ছিল যথাক্রমে ১১০ বর্গফুট এবং ৪৫০ ফূট। মূল দেহের গোটা শরীরে একটা প্যাচানো সিড়ি বেয়ে উঠতে হতো। বাতিঘর তৈরির সময় ৪৫০ ফুট উচুতে যে বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্বে সেটি আর কেউ নিভতে দেখেনি। ৫০ মাইল দূর থেকেও বাতিঘরটি দেখা যেত। ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিন বার ভূমিকম্পের শিকার হয়েছে বাতিঘরটি। ১৪'শ শতকে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে বাতিঘরটি ভেঙ্গে পড়ে।