কুরআন ও হাদীসের আলোকে গান-বাজনা নিষিদ্ধ হওয়া

অনেকেই মনে করেন কুরআন ও হাদীসে গান-বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোন নির্দেশনা নেই, যার ফলে তারা গান-বাজনাকে হালাল মনে করেন। এটা ঠিক নয়। এ বিষয়ে কুরআনেও নির্দশনা আছে এবং অনেক সহিহ হাদীসেও। এখানে সংক্ষেপে সংশয়হীন কিছু নির্দেশনা দেয়া হলো।

কুরআনে নিষিদ্ধ

আল্লাহু তায়ালা বলেছেন, "মানুষদের মাঝে এমন ব্যক্তিও  আছে যে অর্থহীন অসার বাক্য খরিদ করে, যাতে করে সে অজ্ঞতার ভিত্তিতে (মানুষকে) আল্লাহু তায়ালার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, সে একে হাসি বিদ্রুপ তামাশা হিসাবেই গ্রহণ করে, এরাই হচ্ছে সেসব মানুষ যাদের জন্যে রয়েছে অপমানকর শাস্তি" (সূরা লূকমান ৬)

উপরোক্ত আয়াতটি সম্বন্ধে আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা:) তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন আয়াতে 'অসার বাক্য' বলতে গানকে বোঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/৪৪১, হাদীস সম্ভার ২৩০৫)

হাদীসে নিষিদ্ধ

অন্যদিকে অনেক সহিহ হাদীস থেকে গান বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। একটি কথা মনে রাখতে হবে হাদীসও আল্লাহু তায়ালারই কথা, কারণ কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে, 'তিনি (নবী) নিজ প্রবৃত্তি থেকে কিছু বলেন না' (সূরা নাজম ৩-৫)

রসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, "অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র হালাল মনে করবে" (বুখারী ৫৫৯০)। রসুলুল্লাহ (সা:) আরো বলেছেন, "অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহু তায়ালা তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শুকরে পরিণত করবেন" (ইবনে মাজাহ ৪০২০)

সুরের অপরিহার্যতা

সুর ছাড়া মানুষের জীবন শুষ্ক মরুভূমির মতো, আর সুর সেই মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো! সুর সৃষ্টিই করা হয়েছে সৃষ্টিকে সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী করার জন্যে! আল্লাহু তায়ালা'র নবী দাউদ (আ:) যখন যাবুর কিতাব তিলাওয়াত করতেন তখন আকাশের পাখি আর পানির মাছ তার সুললিত কন্ঠের সমধুর সুরের তিলাওয়াত শোনার জন্যে নিকটবর্তী হয়ে যেত! তাই সুরের প্রতি মানুষের টান আর আসক্তি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। যা বুঝতে হবে তা হলো প্রতিটি জিনিষেরই দুটি দিক আছে একটি ভালো, আরেকটি মন্দ। গান যখন অর্থহীন অশ্লীল শব্দ দিয়ে, পরিবেশের স্বাভাবিকতা বিনষ্টকারী বাদ্যযন্ত্রসহ পরিবেশিত হয় তখন সেটি মন্দ যা আসে শয়তানের প্ররোচণা থেকে, অন্যদিকে গান যখন বাদ্যযন্ত্রহীন, অর্থ ও শালীনতাপূর্ণভাবে পরিবেশিত হয় তখন সেটা অগ্রহণযোগ্য নয় যতক্ষণ না সেটা আল্লাহ তায়ালা'র স্মরণ থেকে মানুষকে দুরে সরিয়ে না দেয়। আধুনিক গবেষনায় দেখা গেছে সুর মানুষের মস্তিষ্কে একধরণের তরঙ্গ তৈরি করে যা তার শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলোকে  সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 

সূর থেকে কল্যাণ পাওয়ার উপায় 

মানুষের কুরআনের প্রতি অনাসক্তি তাদেরকে আজ অনেক ভুলের ভিতরে নিমজ্জিত করেছে। মানুষের শরীর, মন ও আত্নাকে প্রশান্তি ও সুস্থতার অনুভুতি দানকারী হচ্ছে কুরআন! কুরআন যে কত চমৎকৃত হওয়ার মতো সুরে তিলাওয়াত করা যেতে পারে, আজ আধুনিক মিডিয়ার কারণে পৃথিবীর বিখ্যাত সব কারীদের তিলাওয়াত শুনলে কিছুটা বোঝা যায়! মানুষ যেন সুর (কুরআনের) থেকে লাভবিত হয় সে জন্যে প্রতিদিন, প্রতি রাতে তিলাওয়াত করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা:) প্রতি রাতে সুদীর্ঘ সময় উচ্চ কন্ঠে সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তিনি (সা:) বলে দিয়েছেন, যে সুর ছাড়া তিলাওয়াত করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়! এ থেকে কি বোঝা যায় না সুর প্রতিদিন মানুষের দরকার? আর কুরআনই হচ্ছে সেই মাধ্যম?

পবিত্র ও অপবিত্র সূরের লাভ ক্ষতি

সুর যখন অর্থহীন কথার সাথে বাদ্যযন্ত্রসহ দীর্ঘ সময় শোনা হয় তখন এটা এক ধরনের মানসিক বৈকল্যতা, উদাসীনতা, কর্মের প্রতি অনীহা, পরিবারের সদস্যদের প্রতি অমনযোগিতাউগ্র মেজাজ তৈরি করে যা একজন মানুষকে এক পর্যায়ে অসুখী ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং সবশেষে অসুস্থ করে দেয়!  

অন্যদিকে পবিত্র সমধুর সূর দিয়ে মানুষকে এমন এক জগতে নিয়ে যাওয়া হয় যা তাকে করে তুলে প্রানবন্ত, দুশ্চিন্তা মুক্ত প্রশস্ত হৃদয়ের এক সুস্থ মানুষ! আল্লাহু তায়ালা বলেছেন, "কুরআন বিশ্বাসীদের জন্য রহমত ও রোগের উপশম স্বরুপ" (সূরা বানী ইসরাঈল ৮২)। বিখ্যাত মিশরীয় ক্বারী আব্দুল বাসিতের জীবনী থেকে একটি ঘটনা পাওয়া যা, কোন এক বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী তাঁর সুমধুর সুরের কুরআন তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার কাছে এটা অতুলনীয় মনে হয়েছিল!

সুতরাং সূরের প্রতি ভালো লাগা ছাড়তে হবে না, ছাড়তে হবে শুধু বাদ্যযন্ত্রসহ অর্থহীন অসঙ্গতিপূর্ণ কথা-বার্তা'র সঙ্গীত আর নর্তকীদের পরিবেশনা।